‘তথ্য বিকৃতি’ বনাম ‘বস্তুনিষ্ঠ’ সাংবাদিকতা Published by Bangladesh Awami League

গবেষণাসহ বেশ কিছু কারণে দেশের সাংবাদিকদের সঙ্গে চলাফেরা। আর তার অংশ হিসেবেই ‘বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা’, ‘সঠিক তথ্য উপস্থাপন’ এবং ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ শব্দগুলোর সঙ্গে আমার পরিচয়। সম্প্রতি বাংলাদেশে বেশ আলোচিত নাম নেত্র নিউজ এবং তার সম্পাদক তাসনিম খলিল ও ডেভিড বার্গম্যান। দেশের সব মূলধারার গণমাধ্যমকে হলুদ, লাল, নীল, আরো বহু রঙের সাংবাদিকতা বলে প্রমাণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কিন্তু তারা যা চর্চা করছেন, তা কতটুকু বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সময় এসেছে।

বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের পতন এবং ক্ষমতার পটপরিবর্তনের লক্ষ্যে বেশ কয়েক বছর ধরেই কাজ করে যাচ্ছেন ডেভিড বার্গম্যান। তার সঙ্গে গেল কয়েক বছর ধরে যুক্ত তাসনিম খলিল। তাদের পরিচালনায় নেত্র নিউজ অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের নামে একের পর এক বাঘ-ভাল্লুক মারার গল্প শোনালেও আসলে পক্ষপাত দুষ্ট ও একপেশে সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে তারা, যা আজ প্রমাণিত।

সম্প্রতি নতুন এক সংবাদ উপস্থাপন করেছে নেত্র নিউজ, যেখানে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজেরিকের কাছে নেত্র নিউজের এক সাংবাদিক আল জাজিরার প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চান। প্রশ্নের প্রতি উত্তরে জাতিসংঘের এই মুখপাত্র জানান, ‘বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদন্ত করা উচিত’।

কিন্তু বস্তুনিষ্ঠতার কথা বলা নেত্র নিউজের কর্ণধার তাসনিম খলিল এবং ডেভিড বার্গম্যান এই তথ্যটি বিকৃত করে ফেলেন বেশ সহজে। তারা নিজ নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ও বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে যে, ‘আল জাজিরার করা অভিযোগের ভিত্তিতে জাতিসংঘ বাংলাদেশ ইস্যুতে তদন্ত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ’। কিন্তু বাস্তবে তা একেবারেই সত্য নয়। এটি বেশ স্পষ্ট যে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র ডুজেরিক ‘সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ’ বলতে ‘বাংলাদেশের সরকারকে’ বুঝিয়েছেন, যাদের এ বিষয়ে তদন্তের এখতিয়ার রয়েছে। কেননা জাতিসংঘের একজন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি খুব ভালো করেই জানেন, নিজ এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত প্রদানের ক্ষমতা রাখে না জাতিসংঘ বা তার কর্মকর্তাবৃন্দ। বরং ডুজেরিক জানান, আল জাজিরার অভিযোগ সত্য হলে এবং ইসরায়েল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোন যন্ত্র কিনে থাকলে তা জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের জন্য ব্যবহার হচ্ছে কিনা, তা জাতিসংঘ খতিয়ে দেখতে পারে।

কিন্তু নেত্র নিউজ তথ্য বিকৃতির মাধ্যমে বলার চেষ্টা করেছে জাতিসংঘের কর্মকর্তাবৃন্দ আল জাজিরার তৈরি করা গুরুতর অভিযোগ আমলে এনে বৈশ্বিকভাবে তদন্তের আহ্বান করবে বলে জানিয়েছে! আর এভাবে তথ্যের ওপর রঙ মাখিয়ে সংবাদ পরিবেশনকে তারা বলছে ‘বস্তুনিষ্ঠতা’!

খবরটি প্রকাশ করে আল জাজিরাও। পক্ষপাত দুষ্ট সংবাদ পরিবেশনের কারণে বারবার সমালোচিত আল জাজিরায় প্রকাশিত এই সংবাদ বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত হলেও ডুজেরিক তার যে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের নাম নেই! এমন গুরুতর অভিযোগ আমলে আনার পরও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তা লিখতে কি জাতিসংঘ গেছে? মোটেও নয়, বিষয়টি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বলেই জাতিসংঘ তা আমলে নেয়নি। এর মাধ্যমে আরো একবার নেত্র নিউজ ও আল জাজিরার উদ্দেশ্য প্রণোদিত সংবাদ প্রকাশের ঘটনা নগ্নভাবে সামনে এসেছে। অবশ্য এই সংবাদ প্রকাশের মূল কারণে সফল হতে পারেননি বার্গম্যান-খলিল। প্রকাশিত এই সংবাদে তাদের মূল্য লক্ষ্য ছিলো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে মার্কিন সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশের সেনা প্রধানের সাক্ষাৎ বাতিল করা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাতিল হয়নি। বরং ওই বৈঠক যথা সময়েই হচ্ছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হওয়ার পর থেকেই কিছু মানবাধিকার সংগঠন বাংলাদেশের বিরোধিতা করে আসছে। তাদের মূল লক্ষ্য কী সেটা এখন সাধারণ মানুষ খুব ভালোই বোঝে। জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর যারা বাংলাদেশে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের আশা করছিলেন, তারা হতাশ। বরং বাংলাদেশের সঙ্গে পূর্বের সম্পর্কটাই চালিয়ে যেতে চাইছে বাইডেন প্রশাসন।

বাংলাদেশে ‘গণমাধ্যম স্বাধীন নয়’, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই’- এমন কথা যারা বারবার বলেন, তারা যখন বাংলাদেশের সেনা প্রধান ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে অতিরঞ্জিত খবর প্রকাশ করেন তখনও তা বন্ধ করে দেয়নি সরকার। আল জাজিরার সূত্র ব্যবহার করে দেশের যেসব গণমাধ্যম সংবাদ প্রকাশ করেছে তাদেরও সরকার কোন চাপ প্রয়োগ করেনি। এটাকেই বলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও বাক স্বাধীনতা।

বরং আল জাজিরার প্রতিবেদনটি সরকার বন্ধ না করায় হিতে বিপরীত হয়ে গেলো। উল্টো আল জাজিরায় প্রকাশিত প্রতিবেদনটির যে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে বাংলাদেশে, তা দেখে দারুণ আশাবাদী আমি। প্রতিবেদনটির তথ্য ঘাটতি, বিকৃতি ও অন্যান্য সমস্যা নিয়ে এভাবে সমালোচনা হবে, তা হয়ত কল্পনাও করেননি অনেকে।

লেখকঃ অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রেসিডেন্ট, ওয়ান বাংলাদেশ

News Link

Published by Bangladesh Awami League on 06 February 2021

সৌজন্যেঃ সমকাল

Related Posts