
জুলিও কুরি: বঙ্গবন্ধু ও বর্তমান বিশ্বশান্তি প্রেক্ষাপট – Published by Bangladesh Awami League & Channel i
করোনাভাইরাসের করালগ্রাসে বিশ্ব আজ মহামারীতে পরিণত হয়েছে। হাজার হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। কর্মহীন হয়ে পড়ছে কোটি কোটি মানুষ। সকল বিশ্ব সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, এ সংকট আরো বাড়বে। দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে বহুলাংশে। কোটি কোটি মানুষের দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন হবার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এরই মধ্যে অনেক কল-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে ও যাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছে। সারা বিশ্বই এখন লকডাউনে পরিণত হয়েছে। সমগ্র বিশ্ববাসী চরম উৎকণ্ঠা ও সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। বিশ্ব নেতৃত্ব আজ দ্বিধাগ্রস্ত। এই মহামারীতে অনেকে আবার খুঁজছে যুদ্ধ তত্ত্ব। বিশ্ব নেতৃত্বের সঠিক দিকনির্দেশনা ও পদক্ষেপের বৈষম্যও দিনে দিনে বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে আজ বিশ্বে চরম অশান্তি বিরাজ করছে।
বিশ্ব মহামারীর এই পরিস্থিতিতে প্রকটভাবে অভাব অনুভব করছি বিশ্ববন্ধু তথা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। কেননা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বই আজ বিশ্বে বড় প্রয়োজন। বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত বঙ্গবন্ধু অর্জন করতে পেরেছিলেন বিশ্ব নেতাদের আস্থা ও ভরসা। কেন বঙ্গবন্ধুকে আজ বহির্বিশ্বে প্রয়োজন, একটু আলোকপাত করা যাক।
বঙ্গবন্ধুকে বিশ্ব নেতা হিসাবে মনে করতেন ব্রিটিশ এমপি জেমসলামন্ড তিনি বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি, বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’ জাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট কেনেথা কাউন্ডা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন শেখ মুজিবুর রহমান ভিয়েতনামী জনগণকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।
কিউবার প্রেসিডেন্ট ফিদেল কাস্ত্রো বঙ্গবন্ধু প্রসঙ্গে বলেছিলেন “আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি। শেখ মুজিবের মৃত্যুতে বিশ্বের শোষিত মানুষ হারাল তাদের একজন মহান নেতাকে, আমি হারালাম একজন অকৃত্রিম বিশাল হৃদয়ের বন্ধুকে।”
ব্রিটিশ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে বলেছিলেন, ‘শেখ মুজিব জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী এবং দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা ছিলেন।’
ইরাকের সাবেক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন তো বঙ্গবন্ধুকে অমর হিসাবে বিবেচনা করতেন তার উক্তি “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন অমর।’
দ্য গার্ডিয়ানে একাধিক লেখায় উল্লেখ করে – ‘শেখ মুজিব ছিলেন এক বিস্ময়কর ব্যক্তিত্ব’। নিউজ উইকে বঙ্গবন্ধুকে ‘পয়েট অব পলিটিক্স’ বলে আখ্যা দেওয়া হয়।
শোষিত, নিপীড়িত, নিষ্পেষিত, বঞ্চিত ও অসহায় মানুষের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জীবন উৎসর্গ করে গেছেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিশ্ব আজ খাদ্যাভাবের অস্থিরতায় কাতর, বঙ্গবন্ধু তা অনেক আগেই উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তিনি বিশ্বাস করতেন, মাটি থাকলে ফসল হবে আর ফসল হলে খাদ্যাভাব আর থাকবে না।
করোনা মিডেল এ্যাড
বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “যে দেশের মাটিতে একটি বীজ লাগালে একটি গাছ হয় সে দেশের মানুষ না খেয়ে মরতে পারে না”। বঙ্গবন্ধুর দর্শন আজও বিশ্বদরবারে সমাদৃত।
ফ্যাসিবাদ, সাম্রাজ্যবাদ পরিহার করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মাধ্যমে উদার অর্থনীতি ও বন্ধুত্বের ভিত্তিতে দেশ পরিচালনা করে বিশ্বে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। মানবতার রোলমডেল বঙ্গবন্ধুর বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদেশিক নীতিতেও ছিল বিশ্বমানবতার প্রতি তার দূরদৃষ্টির প্রতিফলন।
তিনি বলেছিলেন, “পৃথিবীর বৃহত্তর শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষকে মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিবদের সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।” কথাটি আজও চিরসত্য। বিশ্ব শান্তির স্বপক্ষে অবদান ও বাঙালি জাতির মুক্তি আন্দোলনের স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধুকে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্ব শান্তি পরিষদের প্রেসিডিয়াম কমিটি বিশ্ব শান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্রের নিকট জুলিও কুরি পদক প্রদানের প্রস্তাব করেন।
১৯৭৩ সালের ২২-২৩ মে বিশ্ব শান্তি পরিষদ আয়োজিত ঢাকায় এশিয়ান পিস এন্ড সিকিউরিটি কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। সেই কনফারেন্সের ২য় দিনে অর্থাৎ ২৩ মে ১৯৭৩ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় উন্মুক্ত চত্ত্বরে সুসজ্জিত প্যান্ডেলে বিশ্বশান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে “জুলিও কুরি” পদক প্রদান করেন। পদক প্রদানকালে তিনি বলেন, “শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।”
এ সম্মান পাওয়ার পর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বিশ্ববন্ধু শেখ মুজিব বলেছিলেন “এ সম্মান কোনো ব্যাক্তি বিশেষের জন্য নয়। এ সম্মান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে আত্মদানকারী শহীদদের, স্বাধীনতা সংগ্রামের বীর সেনানীদের। ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক সমগ্র বাংগালী জাতির।”
বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমরা অত্যন্ত গর্বিত যে বঙ্গবন্ধুকে আমরা পেয়েছি, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার স্বাধীন বাংলা আমরা পেয়েছি। সত্যি বিশ্বের এ ক্রান্তিকালে বঙ্গবন্ধুকে আজ খুব প্রয়োজন।
Published by Channel-i on 23 May 2020
Published by Bangladesh Awami League on 23 May 2020
-
Previous Post
একজন রাদওয়ান মুজিব
-
Next Post
শোকাবহ ১৫ আগস্ট ও নিষ্ঠুর জিয়া উপাখ্যান